ব্লগ

Spread the love

FXTRADING BD এর ব্লগ-এ বৈদেশিক মুদ্রা বাজার  বা ফরেক্স মার্কেট  নিয়ে বাংলা ভাষায় সহজভাবে ও সংক্ষিপ্ত আকারে সাধারণ আলোচনা :

আজকের এই পোষ্টে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা বাজার বা ফরেক্স নিয়ে আলোচনা করবো । বিশেষ করে যারা এই মার্কেটে নতুন অথবা বাংলা ভাষায় ফরেক্স বিষয়ে জানতে ও ফরেক্স হতে আয় করতে আগ্রহী , আজকের পোষ্টটি তাদের জন্য অনেক সহায়ক হতে পারে । ফরেক্স মার্কেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক বাজার, যেখানে প্রতিদিন ট্রিলিয়ন ডলারের মুদ্রা কেনা-বেচা হয়। কিন্তু এই জটিল জগৎটি আসলে কী এবং কীভাবে কাজ করে ?

 চলুন , আমরা সহজ ভাষায় জানার চেষ্টা করি।

ফরেক্স মার্কেট কী?

সহজভাবে বলা যায় যে,  ফরেক্স মার্কেট হলো বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিনিময় করার একটি বাজার। শেয়ার বাজারের মতো এখানে কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় স্থান নেই। এটি ইলেকট্রনিকভাবে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত ট্রেডারদের (individual traders) বিশ্বব্যাপী একটি  নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যখন একটি দেশের মুদ্রা বিক্রি করে অন্য দেশের মুদ্রা কেনেন, তখন সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রকুতপক্ষে ফরেক্স মার্কেটে অংশগ্রহণ করে ।

কেন ফরেক্স মার্কেট এত বড়?

ফরেক্স মার্কেটের বিশালতার প্রধান কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একে অপরের সাথে ব্যবসা করে, যার জন্য মুদ্রার বিনিময়ের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও, বিনিয়োগকারীরা এক দেশের মুদ্রা থেকে অন্য দেশের মুদ্রায় বিনিয়োগ করে লাভের সুযোগ খোঁজেন। এই বিপুল পরিমাণ লেনদেনের কারণেই ফরেক্স মার্কেট এত তারল্য (ট্রিলিয়ন ডলারের)এবং এই মার্কেট হতে প্রচুর  আয় করার সুযোগ ও তৈরি হয়।

ফরেক্স ট্রেডিং কীভাবে কাজ করে?

ফরেক্স মার্কেট বিকেন্দ্রীভূত, অর্থাৎ এর কোনো নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর নেই। বিশ্বের বিভিন্ন আর্থিক কেন্দ্র যেমন লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, টোকিও, সিঙ্গাপুর এবং হংকং জুড়ে এটি ২৪ ঘণ্টা (সপ্তাহে ৫ দিন) খোলা থাকে। এই কেন্দ্রগুলো বিভিন্ন টাইম জোনে অবস্থিত হওয়ায়, ট্রেডাররা যেকোনো সময় লেনদেন করতে পারেন।

ফরেক্স ট্রেডিংয়ে সাধারণত দুটি দেশের “মুদ্রা জোড়া” (currency pair) নিয়ে কাজ করা হয়, যেমন EUR/USD, GBP/JPY ইত্যাদি। প্রথম মুদ্রাটিকে “বেস কারেন্সি” (base currency) এবং দ্বিতীয়টিকে “কোয়ান্ট কারেন্সি” (quote currency) বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি EUR/USD এর মান 1.1200 হয়, তাহলে এর অর্থ হলো 1 ইউরো কিনতে 1.1200 মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হয়।

ফরেক্স মার্কেটের কিছু জনপ্রিয় মুদ্রা জোড়া :

  • EUR/USD (ইউরো/মার্কিন ডলার)
  • GBP/USD (ব্রিটিশ পাউন্ড/মার্কিন ডলার)
  • USD/JPY (মার্কিন ডলার/জাপানি ইয়েন)
  • AUD/USD (অস্ট্রেলিয়ান ডলার/মার্কিন ডলার)
  • USD/CAD (মার্কিন ডলার/কানাডিয়ান ডলার)

উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি মনে করেন ইউরোর দাম মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাড়বে, তাহলে আপনি EUR/USD “বাই” (Buy) করবেন। এর মানে হলো আপনি ইউরো কিনছেন এবং একই সাথে মার্কিন ডলার বিক্রি করছেন। যদি আপনার ধারণা সঠিক হয় এবং ইউরোর দাম বাড়ে, তাহলে আপনি লাভ করবেন। বিপরীতভাবে, যদি ইউরোর দাম কমে যায়, তাহলে আপনার ক্ষতি হবে।

ফরেক্স  মার্কেট ভালোভাবে বোঝার জন্য  কিছুগুরুত্বপূর্ণ শব্দ রয়েছে যা আপনার জানা দরকার:

  • পিপ (Pip): এটি ফরেক্স মার্কেটে দামের সবচেয়ে ছোট একক পরিবর্তন।
  • লট (Lot): এটি ট্রেডের পরিমাণ নির্ধারণ করে। বিভিন্ন সাইজের লট রয়েছে যেমন  স্ট্যান্ডার্ড লট (১০০,০০০ ইউনিট), মিনি লট (১০,০০০ ইউনিট) এবং মাইক্রো লট (১,০০০ ইউনিট) ।
  • লিভারেজ (Leverage): ব্রোকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি সুবিধা, যার মাধ্যমে আপনি আপনার অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের চেয়ে বেশি পরিমাণে ট্রেড করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ১:১০০ লিভারেজের মানে হলো আপনার অ্যাকাউন্টে ১০০০ ডলার থাকলে আপনি ১০০,০০০ ডলার পর্যন্ত ট্রেড করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, লিভারেজ যেমন লাভের সম্ভাবনা বাড়ায়, তেমনি ক্ষতির ঝুঁকিও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
  • মার্জিন (Margin): একটি ট্রেড ওপেন রাখার জন্য আপনার অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ হলো মার্জিন
  • স্প্রেড (Spread): স্প্রেড হলো কোন একটি মুদ্রা জোড়ার (Currency Pair)  ক্রয় (Bid) এবং বিক্রয় (Ask) দামের মধ্যে পার্থক্য। স্প্রেড ব্রোকারভেদে ভিন্ন হয় এবং এটি ব্রোকারের আয়ের প্রধান উৎস।

নতুনদের জন্য ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করার টিপস

 যদি আপনি ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করতে আগ্রহী হন, তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:

  • প্রথমে শিখুন: ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করার আগে ভালোভাবে শিখুন এবং মার্কেটের গতিপ্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করুন। বিভিন্ন রিসোর্স, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ণ , মার্কেট অ্যানালাইসিস ইত্যাদি ভালোভাবে জানুন ও শিখুন। প্রয়োজনে সহায়ক হিসাবে  আমাদের ডেইলিফরেক্সবিডি-এর ব্লগ এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন।
  • ডেমো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন: লাইভ ট্রেডিং শুরু করার আগে  অবশ্যই একটি ডেমো অ্যাকাউন্টে ভার্চুয়াল অর্থ দিয়ে অনুশীলন করুন। এটি আপনাকে মার্কেট এবং ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সাথে পরিচিত হতে সাহায্য করবে।
  • একটি ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন: একটি সুনির্দিষ্ট ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করুন, যেখানে আপনার ট্রেডিংয়ের লক্ষ্য, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা এবং আপনার নিজস্ব কৌশল  থাকবে।
  • আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন: ট্রেডিংয়ের সময় আবেগ দ্বারা চালিত হওয়া উচিত নয়। ঠান্ডা মাথায় এবং যুক্তিযুক্তভাবে সিদ্ধান্ত নিন।
  • ধৈর্য ধরুন: ফরেক্স মার্কেটে দ্রুত ধনী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ধৈর্য ধরুন, নিজের ট্রেডিং প্ল্যানের প্রতি অবিচল থাকুন এবং ক্রমাগত শিখতে থাকুন।
  • একটি ভালো ব্রোকার নির্বাচন করুন: একটি নির্ভরযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রিত ব্রোকার নির্বাচন করা সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রোকারের রেগুলেশন, ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম, স্প্রেড এবং গ্রাহক পরিষেবা ভালোভাবে যাচাই করুন। আমাদের ওয়েবসাইটে ভালো ব্রোকারের রিভিউ দেখতে পরেন।
  • ছোট বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করুন: যখন আপনি আসল টাকা দিয়ে ট্রেড শুরু করবেন, তখন প্রথমে ছোট অঙ্কের বিনিয়োগ করুন। ধীরে ধীরে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
  • ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: একটি কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল তৈরি করুন। প্রতিটি ট্রেডে আপনার মোট মূলধনের কত অংশ ঝুঁকি নেবেন, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে নিন। স্টপ-লস (Stop-Loss) ব্যবহার করা জরুরি।
  • অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করুন: বিভিন্ন অর্থনৈতিক খবর এবং ইভেন্টগুলো মুদ্রার দামে বড় প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিত অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করুন।

ফরেক্স ট্রেডিংয়ের সুবিধা ও অসুবিধা :

  • ফরেক্স ট্রেডিংয়ের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে যা নতুনদের জেনে রাখা দরকার:
  • সুবিধা:
  • ২৪ ঘণ্টার মার্কেট: ফরেক্স মার্কেট সপ্তাহে ৫ দিন, ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, যা ট্রেডারদের তাদের সুবিধামত সময়ে ট্রেড করার সুযোগ দেয়।
  • উচ্চ তারল্য (High Liquidity): এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক বাজার হওয়ায়, এখানে লেনদেনের পরিমাণ অনেক বেশি, ফলে যেকোনো সময় সহজে মুদ্রা কেনা-বেচা করা যায়।
  • লেনদেনে কম খরচ (Low Transaction Cost): সাধারণত স্টক মার্কেটের তুলনায় ফরেক্স মার্কেটে ব্রোকারেজ ফি বা কমিশন বা লেনদেন খরচ অনেকটা-ই কম হয়।
  • লিভারেজ (Leverage) সুবিধা: ব্রোকাররা লিভারেজ সুবিধা দেয়, যার মাধ্যমে অল্প পুঁজি দিয়েও বড় অঙ্কের ট্রেড করা সম্ভব। তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
  • যেকোনো স্থান থেকে ট্রেডিং: ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে ফরেক্স ট্রেড করা যায়।
  • অসুবিধা:
  • উচ্চ ঝুঁকি: লিভারেজের কারণে লাভ যেমন বেশি হতে পারে, তেমনি ক্ষতির পরিমাণও অনেক বেশি হতে পারে।কাজেই বেশি লিাভারেজ আপনাকে উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
  • জটিলতা: ফরেক্স মার্কেটের গতিবিধি বোঝা এবং সঠিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া নতুনদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
  • প্রতারণার ঝুঁকি: কিছু অসাধু ব্রোকার বা স্ক্যামিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই ব্রোকার নির্বাচনে সতর্ক থাকা জরুরি।
  • প্রয়োজনীয় জ্ঞান: ফরেক্স ট্রেডিংয়ে সফল হতে হলে মার্কেট বিশ্লেষণ, ট্রেডিং কৌশল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

ডেইলিফরেক্সবিডি কেন?

ডেইলিফরেক্সবিডি  ফরেক্স হতে আপনাদের ভালো আয় করতে সহায়তা করার জন্য ফরেক্স মার্কেট সম্পর্কিত বিশেষ খবর, বিশ্লেষণ এবং শিক্ষামূলক কন্টেন্ট ইত্যাদি নিয়ে হাজির, তাও আবার সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায়! আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাভাষী ট্রেডারদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে তারা ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।

বাংলাদেশে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের আইনি দিক

বাংলাদেশে ফরেক্স ট্রেডিং এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রিত নয়। কিছু অসাধু চক্র “ফরেক্স ট্রেডিং” বা “ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং” এর নাম করে অবৈধ এমএলএম বা স্ক্যামিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাই Fxtrading BD সবসময় বিশ্বস্ত এবং আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত ব্রোকারদের মাধ্যমে ট্রেড করার পরামর্শ দেয়, যারা বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে পরিচালিত হয়। যেকোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে:

ফরেক্স ট্রেডিং একটি লাভজনক সুযোগ হতে পারে, তবে এটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। সঠিক জ্ঞান, প্রশিক্ষণ, এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি ফরেক্স মার্কেটে সফল হতে পারেন। Fxtrading BD আপনাদের ফরেক্স ট্রেডিং যাত্রায় প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এবং সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। মনে রাখবেন, ধৈর্য এবং শৃঙ্খলা ফরেক্স ট্রেডিংয়ে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

শুভ ট্রেডিং!

ডেইলিফরেক্সবিডি টিম

Scroll to Top