ফরেক্স ট্রেডিংয়ের আদ্যোপান্ত: মুদ্রা বাজারে আপনার প্রথম পদক্ষেপ !

Spread the love
মুদ্রা বাজারে আপনার প্রথম পদক্ষেপ

ফরেক্স ট্রেডিং একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ ক্ষেত্র । ফরেক্স মার্কেট  বিশাল এবং জটিল । আর এই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিশাল মার্কেটে ফরেক্স ট্রেডিং করার জন্য আপনার নিজেকে হতে হবে একজন দক্ষ ট্রেডার । তাই  ফরেক্স ট্রেডিং (Forex Trading) শুরুর আগেই ফরেক্স এর কতকগুলি মৌলিক ধারণা এবং এই মার্কেটের সাথে সম্পর্কিত শব্দগুলো ভালোভাবে জানা ও  বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।  নিচে ফরেক্স ট্রেডিংয়ের প্রধান প্রধান মৌলিক ধারণাগুলো বা ফরেক্স ট্রেডিংয়ের আদ্যোপান্ত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

১. ফরেক্স ট্রেডিং (Forex Trading) কী?

ফরেক্স (Forex) শব্দটি আসলে “ফরেইন এক্সচেঞ্জ” (Foreign Exchange)-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। আর ফরেক্স ট্রেডিং বলতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে ট্রেডিং করা বুঝায়।

এটি এমন একটি বিকেন্দ্রীভূত বৈশ্বিক বাজার যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় (বিনিময়) করা হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশি তারল্য সমৃদ্ধ (liquid) আর্থিক বাজার, যেখানে প্রতিদিন ট্রিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়।

২. ফরেক্স লেনদেন কেন করা হয়?


 প্রধানত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে (যেমন আন্তর্জাতিক ব্যবসা), বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে (যেমন বিদেশী সম্পদে বিনিয়োগ), এবং ফটকাবাজি (Speculation) বা মুনাফা (মুদ্রার মূল্যের পরিবর্তন থেকে লাভ করা) অর্জনের উদ্দেশ্যে ফরেক্স লেনদেন হয়।

৩.ফরেক্স বাজারের প্রধান অংশগ্রহণকারী এবং তাদের উদ্দেশ্য:

ফরেক্স বাজারে বিভিন্ন ধরনের অংশগ্রহণকারী রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব লেনদেনের উদ্দেশ্য থাকে । যেমন :

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকার: বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সরকারের মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন, মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল বজায় রাখা এবং দেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য ফরেক্স লেনদেন করে।
  • বাণিজ্যিক ব্যাংক: বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি নিজেদের এবং তাদের গ্রাহকদের পক্ষে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের জন্য অপরিহার্য।
  • বড় কর্পোরেশন: আন্তর্জাতিক ব্যবসা এবং বিনিয়োগের জন্য মুদ্রা বিনিময় করে এবং মুদ্রার ঝুঁকি হেজ করে বা স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
  • বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক/হেজ ফান্ড: এরা বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগ করে তাদের পোর্টফোলিওর রিটার্ন বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং ঝুঁকি হেজ করে।
  • খুচরা ট্রেডার (Retail Traders): সাধারণ ব্যক্তিরা বা বিনিয়োগকারীরা সাধারণত স্বল্পমেয়াদী মূল্যের ওঠানামা থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য ফরেক্স ট্রেড করে।

সংক্ষেপে, ফরেক্স লেনদেন বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা মেটানো, বিনিয়োগের সুবিধা নেওয়া, ঝুঁকি কমানো এবং সবচেয়ে বেশি মুদ্রার মূল্যের ওঠানামা থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য করা হয়।

৪. কারেন্সি পেয়ার (Currency Pairs)

ফরেক্স বাজারে মুদ্রাগুলো সবসময় জোড়ায় জোড়ায় ট্রেড করা হয়। একটি জোড়ার মধ্যে একটি মুদ্রা কেনা হয় এবং একই সাথে অন্য মুদ্রাটি বিক্রি করা হয়।

  • উদাহরণ: GBP/USD (ব্রিটিশ পাউন্ড বনাম মার্কিন ডলার), EUR/USD (ইউরো বনাম মার্কিন ডলার),  USD/CAD (মার্কিন ডলার বনাম কানাডিয়ান ডলার)।
  • বেস কারেন্সি (Base Currency): কোন একটি মুদ্রা জোড়ার মধ্যে প্রথম মুদ্রাটিকে বেস কারেন্সি বলে।  যেমন, EUR/USD কারেন্সি পেয়ার এর মধ্যে EUR কে বেস কারেন্সি বলে। এটি সেই মুদ্রা যাকে আপনি অন্য একটি মুদ্রার বিপরীতে বিক্রয় করছেন।
  • কোটেড কারেন্সি (Quoted Currency) / কাউন্টার কারেন্সি (Counter Currency): জোড়ার দ্বিতীয় মুদ্রাকে কোটেড কারেন্সি  বা  কাউন্টার কারেন্সি বলে। যেমন, EUR/USD-তে USD হলো কোটেড কারেন্সি  বা  কাউন্টার কারেন্সি । এটি সেই মুদ্রা যা বেস কারেন্সি কিনতে বা বিক্রি করতে ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণ  : EUR/USD এর অর্থ হলো, 1 ইউরো কিনতে কত মার্কিন ডলার লাগবে। যদি EUR/USD এর মূল্য 1.14908 হয়, তাহলে 1 ইউরো কিনতে 1.14908 মার্কিন ডলার লাগবে।

বেস কারেন্সি এবং কোট কারেন্সি সম্পর্কে সঠিক ধারণা ফরেক্স ট্রেডিংয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি আপনাকে ট্রেডের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য লাভ-লোকসান বুঝতে সাহায্য করে।

৫. বিড (Bid) এবং আস্ক (Ask) মূল্য

যখন আপনি একটি ফরেক্স কোটেশন দেখেন, তখন দুটি মূল্য দেখতে পাবেন:

  • বিড প্রাইস (Bid Price): আপনি যখন একটি ট্রেড বন্ধ (close) করতে চান এবং আপনার ওপেন পজিশনটি (যেটা আপনি কিনেছিলেন) বিক্রি করতে চান, তখন সেটা বিড প্রাইসে কার্যকর হয়।

সোজাকথায়, বিড প্রাইস হলো একটি নির্দিষ্ট আর্থিক সম্পদ (যেমন: মুদ্রা, শেয়ার, বন্ড, ক্রিপ্টোকারেন্সি) এর জন্য একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ যে মূল্য দিতে ইচ্ছুক, বা একজন ব্রোকার (বা মার্কেট মেকার) যে মূল্যে একটি নির্দিষ্ট সম্পদ একজন ট্রেডারের কাছ থেকে কিনতে প্রস্তুত রয়েছে এবং আপনি সেই মূল্য বিক্রি করতে পারবেন ।

  • আস্ক প্রাইস (Ask Price) / অফার প্রাইস (Offer Price): এটি সেই মূল্য যা ব্রোকার আপনাকে কারেন্সি পেয়ারের বেস কারেন্সি কেনার জন্য নিতে প্রস্তুত। অর্থাৎ, আপনি এই মূল্যে কারেন্সি পেয়ারটি কিনতে পারবেন।
  • উদাহরণ: যদি EUR/USD এর কোটেশন 1.14825 /1.14831 হয়, এর অর্থ:
    • আপনি 1.14825 ডলারে 1 ইউরো বিক্রি করতে পারবেন (বিড)।
    • আপনি 1.14831 ডলারে 1 ইউরো কিনতে পারবেন (আস্ক)।

৬. স্প্রেড (Spread)

 বিড প্রাইস এবং আস্ক প্রাইসের মধ্যকার পার্থক্যেকে স্প্রেড বলে। স্প্রেড হলো একজন ট্রেডারের জন্য ট্রেডিং খরচ । ব্রোকাররা এই স্প্রেডের মাধ্যমে লাভ করে থাকে।

 ব্রোকার এবং একাউন্ট ভেদে একই পেয়ারেস্প্রেড  কম-বেশি হতে পারে । যেহেতু স্প্রেড হলো একজন ট্রেডারের জন্য ট্রেডিং খরচ সেহেতু স্প্রেড যত কম হবে একজন ট্রেডারের জন্য ট্রেডিং খরচও তত কম হবে।  EUR/USD এর মতো জনপ্রিয় কারেন্সি পেয়ারগুলোতে সাধারণত স্প্রেড কম থাকে।

৭. পিপস (Pips)

 ফরেক্স ট্রেডিংয়ে পিপস (Pips) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ। “পিপ” (PIP) শব্দটির পূর্ণরূপ হলো “Price Interest Point” বা  “Percentage in Point” । সহজভাবে বলা যায় যে, পিপস হলো ফরেক্স মার্কেটে দুটি মুদ্রার বিনিময় মূল্যের পরিবর্তনের ক্ষুদ্রতম পরিমাপের একক।

বেশিরভাগ মুদ্রা জোড়ায়, একটি পিপ সাধারণত দশমিক বিন্দুর পর চতুর্থ স্থানে (0.0001) অবস্থান করে ।

    উদাহরণ: যদি GBP/USD 1.34825 থেকে 1.34826 -তে পরিবর্তিত হয়, তাহলে এটি 1 পিপ বেড়েছে।

কিছু ব্যতিক্রমী পেয়ার যেমন USD/JPY তে  দশমিক বিন্দুর পর দ্বিতীয় সংখ্যা হলো পিপ ।

উদাহরণ: যদি USD/JPY 145.00 থেকে 145.01 এ পরিবর্তিত হয়, তাহলে এটি 1 পিপ বেড়েছে।

লাভ/ক্ষতি গণনা: ট্রেডাররা পিপসের মাধ্যমে তাদের লাভ বা ক্ষতি গণনা করে।

৮. লট (Lot)

ফরেক্স ট্রেডিংয়ে মুদ্রাগুলো “লট” নামক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ট্রেড করা হয়। লট সাইজ আপনার ট্রেডের আকার এবং সম্ভাব্য লাভ বা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে। বিভিন্ন প্রকার লট রয়েছে । যেমন :

  • স্ট্যান্ডার্ড লট: ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) ইউনিট বেস কারেন্সি।
  • মিনি লট: ১০,০০০ (দশ হাজার) ইউনিট বেস কারেন্সি।
  • মাইক্রো লট: ১,০০০ (এক হাজার) ইউনিট বেস কারেন্সি।
  • ন্যানো লট: ১০০ (এক শত) ইউনিট বেস কারেন্সি (কিছু ব্রোকার অফার করে)।

ছোট লট সাইজ দিয়ে ট্রেড করা নতুন ট্রেডারদের জন্য ঝুঁকি কমানোর একটি ভালো উপায়।

৯. লিভারেজ (Leverage)

  • সংজ্ঞা: লিভারেজ হলো ধার করা মূলধন যা ব্রোকার আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের চেয়ে বড় পজিশন ট্রেড করার অনুমতি দেয়। এটি একটি দ্বিমুখী তলোয়ার। কারন বেশি লিভারেজ আপনার লাভ এবং ক্ষতি দুটির সম্ভবনাকেই বাড়িয়ে দেয় ।
  • উদাহরণ: 1:100 লিভারেজ মানে আপনার অ্যাকাউন্টে 1 ডলার থাকলে আপনি 100 ডলার মূল্যের ট্রেড নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। 1:500 লিভারেজ মানে আপনি 500 ডলার মূল্যের ট্রেড নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
  • সুবিধা: অল্প মূলধন দিয়ে বড় লাভ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
  • ঝুঁকি: লাভ যেমন বাড়াতে পারে, তেমনি ক্ষতিও অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। একটি ছোট প্রতিকূল মূল্যের পরিবর্তন আপনার পুরো অ্যাকাউন্ট খালি করে দিতে পারে।এজন্য  লিভারেজ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।

১০. মার্জিন (Margin)

  • সংজ্ঞা: লিভারেজ ব্যবহার করে ট্রেড করার জন্য আপনার ব্রোকারের কাছে যে পরিমাণ অর্থ জামানত হিসেবে রাখতে হয়, তাই হলো মার্জিন। এটি আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের মূলধনের একটি অংশ যা একটি ট্রেড খোলার জন্য লক হয়ে যায়।
  • মার্জিন কল (Margin Call): আপনি যখন ব্রোকারের কাছ থেকে ধার করে শেয়ার বা অন্যান্য সিকিউরিটিজ কেনেন, তখন আপনার অ্যাকাউন্টে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা সিকিউরিটিজ জামানত হিসেবে রাখতে হয়। এই জামানতের মূল্য যখন ব্রোকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন সীমার (Maintenance Margin) নিচে নেমে যায়, তখন ব্রোকার আপনাকে একটি মার্জিন কল দেয়। যার অর্থ হলো যদি আপনার অ্যাকাউন্টের ইক্যুইটি (Equity) মার্জিনের নিচে চলে যায়, তাহলে ব্রোকার আপনাকে আরও  ফান্ড বা মুলধন একাউন্টে যোগ করতে বলবে। যদি আপনি তহবিল যোগ না করেন, তাহলে ব্রোকার আপনার  ট্রেডটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দিতে পারে (স্টপ আউট) যাতে আপনার ক্ষতি আরও না বাড়ে।

১১. লং (Long) এবং শর্ট (Short) পজিশন

  • লং পজিশন (Long Position) / বাই (Buy): যখন আপনি একটি কারেন্সি পেয়ার কেনেন, তখন আপনি একটি লং পজিশন নিচ্ছেন। এর অর্থ আপনি আশা করছেন যে বেস কারেন্সির মূল্য কোটেড কারেন্সির তুলনায় বাড়বে।

আপনি যখন EUR/USD কেনেন(Buy) (লং পজিশন), এর অর্থ হলো আপনি ইউরো কিনছেন এবং একই সাথে মার্কিন ডলার বিক্রি করছেন। আপনার প্রত্যাশা থাকে যে, ইউরোর মূল্য মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাড়বে।

  • শর্ট পজিশন (Short Position) / সেল (Sell): যখন আপনি একটি কারেন্সি পেয়ার বিক্রি করেন, তখন আপনি একটি শর্ট পজিশন নিচ্ছেন। এর অর্থ আপনি আশা করছেন যে বেস কারেন্সির মূল্য কোটেড কারেন্সির তুলনায় কমবে।
  • আপনি যখন EUR/USD বিক্রি(Sell) করেন (শর্ট পজিশন), এর অর্থ হলো আপনি ইউরো বিক্রি করছেন এবং একই সাথে মার্কিন ডলার কিনছেন। আপনার প্রত্যাশা থাকে যে, ইউরোর মূল্য মার্কিন ডলারের বিপরীতে কমবে।

১২. স্টপ-লস (Stop Loss) এবং টেক-প্রফিট (Take Profit)

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দুটি মৌলিক টুল হলো স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট ।

  • স্টপ লস (Stop Loss): স্টপ লসহলো কোন একটি ট্রেড বা পজিশন ওপেন করার পর আপনার বা ট্রেডারের নিজের দেওয়া একটি স্বয়ংক্রিয় অর্ডার যা আপনার ট্রেডকে একটি নির্দিষ্ট লোকসানের স্তরে পৌঁছানের সাথে সাথে ট্রেডটি বন্ধ (close) করে দেয়। এটি আপনার ক্ষতিকে সীমিত করে এবং আপনার মূলধন রক্ষা করে।
  • টেক প্রফিট (Take Profit): টেক প্রফিটহলো কোন একটি ট্রেড বা পজিশন ওপেন করার পর আপনার বা ট্রেডারের নিজের দেওয়া একটি স্বয়ংক্রিয় অর্ডার যা আপনার ট্রেডকে একটি নির্দিষ্ট লাভের স্তরে পৌঁছানের সাথে সাথে ট্রেডটি বন্ধ (close) করে দেয়। এটি নিশ্চিত করে যে আপনার লাভ একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে সুরক্ষিত হয়েছে।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের মৌলিক ধারণা

১৩.  বিকেন্দ্রীভূত বাজার (Decentralized/OTC):

ফরেক্সের কোনো কেন্দ্রীয় এক্সচেঞ্জ নেই, যেমন শেয়ার বাজারের থাকে। এর লেনদেন বিশ্বব্যাপী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্রোকারদের মাধ্যমে “ওভার-দ্য-কাউন্টার” (OTC) পদ্ধতিতে হয়।

১৪.  ২৪ ঘণ্টা খোলা:

ফরেক্স মার্কেট রবিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত সপ্তাহের ৫ দিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। কারণ, বিশ্বের বিভিন্ন টাইম জোনে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পালাক্রমে কাজ করে। যেমন – সিডনি, টোকিও, লন্ডন এবং নিউইয়র্কের মার্কেটগুলো।

১৫. টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস (Technical Analysis)

টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস অতীতের মূল্যের গতিবিধি এবং প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের দামের গতিবিধি অনুমান করার একটি পদ্ধতি। এইজন্য আপনাকে জানতে হবে-

  • ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন: বিভিন্ন ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (যেমন: হ্যামার, শুটিং স্টার, এনগালফিং প্যাটার্ন) দেখে বাজারের ট্রেন্ড রিভার্সাল বা কন্টিনিউয়েশন সম্পর্কে ধারণা নিতে হয়।
  • চার্ট প্যাটার্ন: বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন (যেমন: হেড অ্যান্ড শোল্ডার্স, ডাবল টপ/বটম, ফ্ল্যাগ) ব্যবহার করে দামের ভবিষ্যৎ গতিবিধি অনুমান করা হয়।
  • ট্রেন্ড লাইন (Trend Lines): আপট্রেন্ড বা ডাউনট্রেন্ড চিহ্নিত করতে ট্রেন্ড লাইন আঁকা হয়।
  • সাপোর্ট রেজিস্ট্যান্স (Support & Resistance): দামের যে স্তরগুলোতে বারবার সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়, সেগুলো চিহ্নিত করা।
  • ইনডিকেটরস (Indicators): বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইনডিকেটর যেমন: মুভিং এভারেজ (Moving Average – MA), রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (Relative Strength Index – RSI), বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands), ম্যাকডি (MACD) ইত্যাদি ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি ও ট্রেডিং সংকেত বোঝা।

 ১৬. ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস (Fundamental Analysis)

এটি কোনো দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণগুলো বিশ্লেষণ করে মুদ্রার মূল্যের উপর তাদের সম্ভাব্য প্রভাব বোঝার একটি পদ্ধতি। অর্থনৈতিক সূচক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি, ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা, নিউজ ও ইকোনমিক ক্যালেন্ডার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা জরুরী ।

এই মৌলিক ধারণাগুলো ফরেক্স ট্রেডিংয়ের ভিত্তি তৈরি করে। এগুলো ভালোভাবে বোঝার পর, আপনি বাজার বিশ্লেষণ, ট্রেডিং কৌশল এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মতো আরও গভীর বিষয়গুলোতে প্রবেশ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, ফরেক্স ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি থাকে, তাই সতর্কতার সাথে এবং ভালোভাবে শিখে ট্রেড করা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top