ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন

Spread the love

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন কি ? (Definition of Candlestick Pattern)

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন হলো যে কোন আর্থিক বাজারের  মূল্যের গতিবিধি (price movement) চিত্রিত করার একটি গ্রাফিক্যাল পদ্ধতি, যা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোনো শেয়ার, মুদ্রা, পণ্য বা অন্য কোনো আর্থিক উপকরণের শুরুর মূল্য (Open price), সর্বোচ্চ মূল্য (High price), সর্বনিম্ন মূল্য (Low price) এবং সর্বশেষ মূল্য (Close price) তথ্য সমন্বিতভাবে উপস্থাপন করে। এই প্যাটার্নগুলো মূলত জাপানি চাল ব্যবসায়ীরা বাজার বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতের মূল্যের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য তৈরি করেছিলেন।

একটি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন একটি বা একাধিক ক্যান্ডেলস্টিকের সমন্বয়ে গঠিত হয় যা বাজারের বর্তমান অবস্থা (sentiment), চাহিদা ও সরবরাহ (demand and supply) এর মধ্যেকার ভারসাম্য এবং সম্ভাব্য মূল্য প্রবণতার ধারাবাহিকতা (continuation) অথবা প্রবণতার(trend ) পরিবর্তন (reversal) নির্দেশ করে। একটি ক্যান্ডেলস্টিক চার্টে প্রতিটি ক্যান্ডেল একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (যেমন – এক দিন, এক ঘণ্টা বা এক মিনিট) দামের গতিবিধি প্রদর্শন করে।

সহজভাবে বলতে গেলে, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন হলো শেয়ার বা অন্য কোনো আর্থিক উপকরণের দামের অতীত আচরণকে একটি ভিজ্যুয়াল ফর্মে উপস্থাপন করা, যা ট্রেডার ও বিশ্লেষকদের বাজারের পরবর্তী সম্ভাব্য গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা দিতে সাহায্য করে।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন  কেন গুরুত্বপূর্ণ ?

এক একটি ক্যান্ডেলস্টিক একটি  নির্দিষ্ট সময়সীমার হয়ে থাকে । ক্যান্ডেলস্টিক সাধারণত  ১ মিনিট, ৫ মিনিট, ১ ঘণ্টা, ১ দিন, ১ সপ্তাহ, ১ মাস ইত্যাদি টাইম ফ্রেমের হয় যা ঐ নির্দষ্ট টাইম ফ্রেমের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট আর্থিক উপকরণের (যেমন: শেয়ার, মুদ্রা জোড়া ইত্যাদি) মূল্যের চারটি গুরুত্বপূর্ণ  তথ্য সরবরাহ করে:

১. ওপেন প্রাইস (Open Price):একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার শুরুতে যে দামে মার্কেটে লেনদেন শুরু হয়েছিল।

২. হাই প্রাইস (High Price): নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মার্কেটে সর্বোচ্চ যে দামে লেনদেন হয়েছিল।

3. লো প্রাইস (Low Price): নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সর্বনিম্ন যে দামে লেনদেন হয়েছিল।

4. ক্লোজ প্রাইস (Close Price): একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার শেষে যে দামে মার্কেটে লেনদেন শেষ হয়েছিল।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের ইতিহাস (উৎপত্তি , প্রাথমিক ব্যবহার ও বর্তমান অবস্থা):

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ এবং এর উৎপত্তি হয়েছে সুদূর জাপানে, যা বহু শতাব্দী ধরে চালের বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি পরবর্তীতে পশ্চিমা বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং আধুনিক আর্থিক বাজারের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।

উৎপত্তি ও প্রাথমিক ব্যবহার (১৮শ শতাব্দী, জাপান):

জাপানের একজন কিংবদন্তী চাল ব্যবসায়ী মুনেহিসা হোম্মা (Munehisa Homma)-কে ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের জনক বলা হয় । তিনি (১৭২৪ থেকে ১৮০৩ সাল ) জাপানের সাকাতা শহরে বাস করতেন এবং জাপানের  ওসাকাতে অবস্থিত দোজিমার চালের বাজারে (Dojima Rice Exchange) ব্যবসা করতেন, যা বিশ্বের প্রথম ফিউচার্স এক্সচেঞ্জগুলির মধ্যে একটি বলে বিবেচিত হয়।

হোম্মা লক্ষ্য করেন যে চালের দাম কেবল চাহিদা ও সরবরাহের উপর নির্ভর করে না, বরং বাজারের অংশগ্রহণকারীদের আবেগ (যেমন: ভয় ও লোভ) এবং মনোবিজ্ঞানের উপরও নির্ভর করে। এই পর্যবেক্ষণগুলো তাকে বাজারের গতিবিধি বোঝার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি তৈরি করতে উৎসাহিত করে। তিনি চালের দামের গতিবিধি রেকর্ড করার জন্য তার নিজস্ব একটি চার্টিং পদ্ধতি তৈরি করেন, যা আজকের ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের ভিত্তি স্থাপন করে।

হোম্মা তার গবেষণার ভিত্তিতে কিছু নিয়ম ও কর্মপদ্ধতির একটি সেট তৈরি করেন যা বিভিন্ন বাজারের পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তিনি ১৭৫৫ সালে ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন নিয়ে লেখা তার প্রথম বই  “দ্য ফাউন্টেন অফ গোল্ড — দ্য থ্রি মানকি রেকর্ড অফ মানি” (The Fountain of Gold — The Three Monkey Record of Money) প্রকাশ করেন। তার এই বইটি ট্রেডিং সাইকোলজি (trading psychology) নিয়ে প্রথম বই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হোম্মার পদ্ধতিগুলো তাকে তৎকালীন সময়ে বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য সম্পদ অর্জন করতে সাহায্য করেছিল বলেও ধারণা করা হয়।

যদিও ধারণা করা হয় হোম্মা সরাসরি আজকের মতো ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ব্যবহার করেননি, তবে তিনি মূল্য, সময় এবং ভলিউমের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বাজারের প্রবণতা বোঝার জন্য একটি ভিজ্যুয়াল পদ্ধতির ধারণা দিয়েছিলেন। ক্যান্ডেলস্টিক চার্টগুলো সম্ভবত মেইজি পিরিয়ডের (late 1800s) প্রথম দিকে জাপানে বিকশিত হয়েছিল, যা হোম্মার মৌলিক ধারণাগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি।

পশ্চিমা বিশ্বে ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন পরিচিতি (বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ):

প্রায় ২০০ বছর ধরে ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন জাপানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে স্টিভ নিসন (Steve Nison) নামেএকজন আমেরিকান টেকনিক্যাল অ্যানালিস্ট জাপানে কাজ করার সময় এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি জাপানি ক্যান্ডেলস্টিক চার্টিং কৌশলগুলো গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন এবং এর কার্যকারিতা উপলব্ধি করেন।

স্টিভ নিসন তার “জাপানিজ ক্যান্ডেলস্টিক চার্টিং টেকনিকস” (Japanese Candlestick Charting Techniques) নামক বইটির মাধ্যমে (যা প্রথম ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয়) ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নকে পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের কাছে পরিচিত করান। তার এই বইটিতে ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নকে আধুনিক বাজার বিশ্লেষণের অন্যতম জনপ্রিয় হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরা হয় এবং এটি বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারে, যেমন ইক্যুইটি, ফিউচার্স, ফরেক্স ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন এর বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বিশ্বজুড়ে ট্রেডার এবং বিশ্লেষকদের কাছে একটি অপরিহার্য টুল হয়ে উঠেছে। এর ভিজ্যুয়াল প্রকৃতি বাজারের সেন্টিমেন্ট এবং সম্ভাব্য মূল্য গতিবিধি দ্রুত বুঝতে সাহায্য করে। এটি অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর এবং বিশ্লেষণ পদ্ধতির সাথে একত্রিত করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এক অনন্য সহায়ক হিসাবে কাজ করে। সময়ের সাথে সাথে, নতুন প্যাটার্ন এবং তাদের প্রয়োগের বিষয়ে আরও গবেষণা ও বিশ্লেষণ যুক্ত হয়েছে, যা ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।

একটি ক্যান্ডেলস্টিকের মৌলিক অংশ :

একটি ক্যান্ডেলস্টিকের প্রধানত তিনটি অংশ থাকে:

১. বডি (Body): এটি ওপেনিং প্রাইস (যে দামে ট্রেড শুরু হয়েছিল) এবং ক্লোজিং প্রাইস (যে দামে ট্রেড শেষ হয়েছিল) এর মধ্যেকার মূল্য পরিসীমাকে নির্দেশ করে। *

সবুজ/সাদা বডি (Bullish Candle): যদি ক্লোজিং প্রাইস ওপেনিং প্রাইসের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে বডি সাধারণত সবুজ বা সাদা রঙের হয়। এটি নির্দেশ করে যে ক্রেতারা সক্রিয় ছিল এবং দাম বেড়েছে।

 * লাল/কালো বডি (Bearish Candle): যদি ক্লোজিং প্রাইস ওপেনিং প্রাইসের চেয়ে কম হয়, তাহলে বডি সাধারণত লাল বা কালো রঙের হয়। এটি নির্দেশ করে যে বিক্রেতারা সক্রিয় ছিল এবং দাম কমেছে।

  উইকস/শ্যাডো (Wicks/Shadows): এগুলি বডির উপরে এবং নিচে থাকা সরু রেখা যা নির্দিষ্ট সময়ের সর্বোচ্চ (High) এবং সর্বনিম্ন (Low) দামকে নির্দেশ করে।

২. উপরের শ্যাডো (Upper Shadow / উপরের ছায়া) বা আপার উইক (Upper Wick): এটি বডির উপরের দিক থেকে প্রসারিত একটি সরু রেখা। এই রেখাটি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার সর্বোচ্চ দাম (High Price) নির্দেশ করে। অর্থাৎ, এই সময়সীমার মধ্যে শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ যতটুকু উঠেছিল, সেটাই এই শ্যাডো দেখায়।

৩. নিচের শ্যাডো (Lower Shadow / নিচের ছায়া) বা লোয়ার উইক (Lower Wick): এটি বডির নিচের দিক থেকে প্রসারিত একটি সরু রেখা। এই রেখাটি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার সর্বনিম্ন দাম (Low Price) নির্দেশ করে। অর্থাৎ, এই সময়সীমার মধ্যে শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন যতটুকু নেমেছিল, সেটাই এই শ্যাডো দেখায়।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন কিভাবে কাজ করে?

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলো নির্দিষ্ট মূল্য উঠানামার ধরনকে উপস্থাপন করে যা বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যেকার সম্পর্ক এবং তাদের মানসিকতাকে তুলে ধরে। এই প্যাটার্নগুলো দেখে ট্রেডাররা বাজারের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন। যখন এক বা একাধিক ক্যান্ডেল মিলে একটি নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে, তখন তাকে ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বলে। এই প্যাটার্নগুলো হয় ট্রেন্ডের ধারাবাহিকতা (Continuation) নির্দেশ করে, অথবা ট্রেন্ডের বিপরীতমুখী (Reversal) পরিবর্তন নির্দেশ করে।

বিভিন্ন প্রকার ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন:

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন মূলত দুই ধরনের হতে পারে:

A. বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন (Bullish Reversal Patterns): সাধারণত মার্কেটের একটি নিম্নমুখী প্রবণতা বা  ডাউনট্রেন্ডের শেষে বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন গঠিত হয়।  মূলত, বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্নগুলো নির্দেশ করে যে, চলমান নিম্নমুখী প্রবণতা বা  ডাউনট্রেন্ড শেষ হতে চলেছে এবং একটি উর্ধ্বমুখী প্রবণতা (uptrend) শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিচে কিছু জনপ্রিয় বুলিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো :

হ্যামার (Hammer): একটি ছোট বডি এবং লম্বা নিচের শ্যাডো (উইক) সহ ক্যান্ডেল, যা একটি ডাউনট্রেন্ডের শেষে দেখা যায়। এটি নির্দেশ করে যে বিক্রেতারা প্রাথমিকভাবে দাম কমালেও, ক্রেতারা এসে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইনভার্টেড হ্যামার (Inverted Hammer) একটি  নির্ভরযোগ্য একক ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন যা সাধারণত মার্কেটের একটি নিম্নমুখী প্রবণতার (downtrend) শেষে দেখা যায় ।  এটি একটি বুলিশ রিভার্সাল সিগন্যাল (bullish reversal signal) ক্যান্ডেল হিসাবে বিবেচিত হয়। এর নামটি এর আকৃতি থেকে এসেছে, যা একটি উল্টানো হাতুড়ির মতো দেখতে। “Inverted Hammer” হলো একটি একক ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন যা সাধারণত একটি ডাউনট্রেন্ডের (নিম্নমুখী প্রবণতা) শেষে দেখা যায় এবং এটি একটি বুলিশ রিভার্সাল (উর্ধ্বমুখী পরিবর্তনের) সংকেত হিসেবে বিবেচিত হয়। এর আকৃতি উল্টানো হাতুড়ির মতো দেখায় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে।

বুলিশ এনগাল্ফিং (Bullish Engulfing): বুলিশ এনগাল্ফিং একটি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় বুলিশ রিভার্সাল ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন। এটি একটি ডাউনট্রেন্ডের (নিম্নমুখী প্রবণতা) শেষে গঠিত হয়। বুলিশ এনগাল্ফিং সাধারনত দুটি ক্যান্ডেল নিয়ে গঠিত হয়, যেখানে প্রথম ক্যান্ডেলটি একটি ছোট লাল বডি এবং দ্বিতীয় ক্যান্ডেলটি একটি বড় সবুজ বডি হয় যা সম্পূর্ণরূপে প্রথম ক্যান্ডেলকে ঢেকে ফেলে। এটি শক্তিশালী বুলিশ রিভার্সাল নির্দেশ করে।

মর্নিং স্টার (Morning Star): মর্নিং স্টারসাধারনত  তিনটি ক্যান্ডেল নিয়ে গঠিত হয় যার মধ্যে প্রথমটি একটি লম্বা লাল ক্যান্ডেল(Bearish ), দ্বিতীয়টি একটি ছোট বডি যা ডোজি বা স্পিনিং টপ আকার এবং তৃতীয়টি একটি লম্বা সবুজ ক্যান্ডেল(Bullish) । এটিও একটি শক্তিশালী বুলিশ রিভার্সাল সংকেত প্রদান করে।

পিয়ার্সিং লাইন (Piercing Line): পিয়ার্সিং লাইন সাধারনতদুটি ক্যান্ডেল নিয়ে গঠিত । প্রথম ক্যান্ডেলটি লম্বা লাল ক্যান্ডেল এবং দ্বিতীয়টি একটি সবুজ রং-এর ক্যান্ডেল হয় যা প্রথম ক্যান্ডেলের মিডপয়েন্টের উপরের অংশে ক্লোজ হয়।

B. বিয়ারিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন (Bearish Reversal Patterns): এই প্যাটার্নগুলো সাধারণত একটি ঊর্ধ্বগামী ট্রেন্ডের (Uptrend) শেষে দেখা যায় এবং নির্দেশ করে যে দাম কমতে পারে। কিছু জনপ্রিয় বিয়ারিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন হলো:

হ্যাংগিং ম্যান (Hanging Man): হ্যাংগিং ম্যান (Hanging Man) জাপানি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সাধারণত একটি বিয়ারিশ রিভার্সাল প্যাটার্ন হিসেবে পরিচিত। এটি যখন কোনো ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার (uptrend) শীর্ষে বা তার কাছাকাছি দেখা যায়, তখন বোঝা যায় যে, মার্কেট সম্ভবত তার গতিপথ পরিবর্তন করে নিম্নমুখী হতে পারে।

শুটিং স্টার (Shooting Star): ইনভার্টেড হ্যামারের মতোই দেখতে, তবে এটিও একটি আপট্রেন্ডের শেষে দেখা যায় এবং বিয়ারিশ রিভার্সাল নির্দেশ করে।

বিয়ারিশ এনগাল্ফিং (Bearish Engulfing): বিয়ারিশ এনগাল্ফিং প্যাটার্নটি হলো বুলিশ এনগাল্ফিং প্যাটার্নের ঠিক উল্টো । এটিও  অত্যন্ত শক্তিশালী একটি রিভার্সাল ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ।  সধারনত এটি বুলিশ বা উর্ধ্বমুখী প্রবণতার শেষে গঠিত হয় এবং একটি বেয়ারিশ বা নিম্নমুখী  প্রবনতার  (রিভার্সাল )সংকেত দেয়। বিয়ারিশ এনগাল্ফিংদুইটি ক্যান্ডেল নিয়ে গঠিত, যেখানে প্রথম ক্যান্ডেলটি একটি ছোট সবুজ বডি এবং দ্বিতীয় ক্যান্ডেলটি একটি বড় লাল বডি যা সম্পূর্ণরূপে প্রথম ক্যান্ডেলকে ঢেকে ফেলে। এটি শক্তিশালী বিয়ারিশ রিভার্সাল নির্দেশ করে।

ইভিনিং স্টার (Evening Star): Evening Star -এ তিনটি ক্যান্ডেল থাকে ,যার মধ্যে প্রথমটি একটি লম্বা সবুজ ক্যান্ডেল(Bullish), দ্বিতীয়টি একটি ছোট বডি (ডোজি বা স্পিনিং টপ) এবং তৃতীয়টি একটি লম্বা লাল ক্যান্ডেল (Bearish )। এটি একটি শক্তিশালী বিয়ারিশ রিভার্সাল সংকেত প্রদান করে।

ডার্ক ক্লাউড কভার (Dark Cloud Cover): ডার্ক ক্লাউড কভার প্রধানত দুটি ক্যান্ডেল নিয়ে গঠিত হয় । প্রথম ক্যান্ডেলটি লম্বা সবুজ রং এর ক্যান্ডেল (Bullish) হয় এবং দ্বিতীয় ক্যান্ডেলটি একটি লাল বং এর ক্যান্ডেল (Bearish )হয় যা প্রথম ক্যান্ডেলের মিডপয়েন্টের নিচে ক্লোজ হয়।

C. কন্টিনিউয়েশন প্যাটার্ন (Continuation Patterns): এই প্যাটার্নগুলো বিদ্যমান ট্রেন্ডের ধারাবাহিকতা নির্দেশ করে। যেমন :-

মারুবজু (Marubozu): মারুবজু -তে লম্বা বডি এবং কোন উইক বা শ্যাডো থাকে না। সবুজ মারুবজু শক্তিশালী বুলিশ সেন্টিমেন্ট এবং লাল মারুবজু শক্তিশালী বিয়ারিশ সেন্টিমেন্ট নির্দেশ করে।

স্পিনিং টপ (Spinning Top): স্পিনিং টপ হলো একটি একক ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ছোট বডি এবং  উপরে ও নিচে লম্বা শ্যাডো থাকে। সহজ কথায়, স্পিনিং টপ দেখতে একটি লাটিমের (Spinning Top) মতো, যার কেন্দ্র একটি ছোট বডি এবং দু’পাশে সমান দৈর্ঘ্যের লম্বা দণ্ড থাকে। এটি বাজারে অনিশ্চয়তা নির্দেশ করে, যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই সমান শক্তিশালী।

ডোজি (Doji): যদি ওপেনিং প্রাইস এবং ক্লোজিং প্রাইস প্রায় একই হয়, যার ফলে বডি খুব ছোট বা একটি লাইনের মতো দেখায় তবে তাকে ডোজি বলা হয়। এটি বাজারের সিদ্ধান্তহীনতা নির্দেশ করে। বিভিন্ন ধরনের ডোজি প্যাটার্ন রয়েছে (যেমন – লং লেগ ডোজি, ড্রাগনফ্লাই ডোজি, গ্রেভস্টোন ডোজি)।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণ:

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন বিশ্লেষণের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন:

  1. ট্রেন্ড (Trend): প্যাটার্নটি কোন ট্রেন্ডে (আপট্রেন্ড, ডাউনট্রেন্ড বা সাইডওয়েজ) গঠিত হয়েছে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। রিভার্সাল প্যাটার্নগুলো ট্রেন্ডের শেষে বেশি কার্যকর হয়।
  2. ভলিউম (Volume): ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন গঠিত হওয়ার সময় ভলিউম কেমন ছিল তা দেখে প্যাটার্নের নির্ভরযোগ্যতা বোঝা যায়। সাধারণত, উচ্চ ভলিউমের সাথে গঠিত প্যাটার্নগুলো বেশি নির্ভরযোগ্য হয়।
  3. সাপোর্ট রেসিস্টেন্স স্তর (Support & Resistance Levels): একজন সফল  ট্রেডারের প্রথম কাজই হলো সাপোর্ট ও রেসিস্টেন্স স্তর চিহ্নিত করা ।প্যাটার্নটি যদি একটি শক্তিশালী সাপোর্ট বা রেসিস্টেন্স স্তরের কাছাকাছি গঠিত হয়, তবে তার প্রভাব আরও বেশি হতে পারে।
  4. কনফার্মেশন (Confirmation): একটি প্যাটার্ন দেখার পর অবিলম্বে ট্রেড না করে, পরবর্তী ক্যান্ডেল বা অন্য টেকনিক্যাল ইনডিকেটরের মাধ্যমে কনফার্মেশন নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নের সুবিধা অসুবিধা:

সুবিধা:

  • সহজবোধ্য: অন্যান্য চার্টের তুলনায় ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট সহজে পড়া যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাজারের অনুভূতি বোঝা যায়।
  • সম্পূর্ণ তথ্য: প্রতিটি ক্যান্ডেল একটি নির্দিষ্ট সময়ের ওপেন, হাই, লো এবং ক্লোজ প্রাইসের সম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
  • বিভিন্ন টাইমফ্রেম: ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্নগুলো যেকোনো টাইমফ্রেম (দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, মিনিট) এ ব্যবহার করা যায়।
  • ঐতিহাসিক ডেটা: ঐতিহাসিক ডেটার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ মূল্য গতিবিধি অনুমান করতে সাহায্য করে।
  • এন্ট্রি এক্সিট পয়েন্ট: ট্রেডারদের জন্য সঠিক এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট নির্ধারণে সহায়ক।

অসুবিধা:

  • ভুল সংকেত: মাঝে মাঝে ভুল সংকেত দিতে পারে, বিশেষ করে যখন বাজারের অস্থিরতা বেশি থাকে।
  • একক প্যাটার্নের সীমাবদ্ধতা: শুধুমাত্র একটি প্যাটার্নের উপর নির্ভর করা বিপজ্জনক হতে পারে; অন্যান্য বিশ্লেষণের সাথে একত্রে ব্যবহার করা উচিত।
  • ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা: একই প্যাটার্ন ভিন্ন ট্রেডার দ্বারা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা হতে পারে।
  • প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা: প্যাটার্নগুলো সঠিকভাবে সনাক্ত করতে এবং ব্যাখ্যা করতে সময় ও অনুশীলনের প্রয়োজন।

সংক্ষেপে, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ট্রেডিংয়ে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, তবে এর সঠিক ব্যবহার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ পদ্ধতির সাথে এর সংমিশ্রণ ট্রেডারদের জন্য সফলতার পথ খুলে দিতে পারে।

Scroll to Top